Mission S.S.C.K. - Unofficial (Chapter 1 ) by Araf Ibn Touhid (people reading books txt) 📖

Part - 1(Incomplete)

 

 

 

 

পর্ব – ১

প্রস্তুতি

 

 

 

১। মেঘ দেখা

 

ছাক্কু আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে । (ছাক্কু - যাদের কাছে ছাক্কু নামটা বেশ অদ্ভুত মনে হচ্ছে বা ঠিক মেনে নিতে পারছো না , তাদের জন্য বলে রাখি । ছাক্কুর আসল নাম ছাক্কু না ! ছাক্কুর সন্ধি বিচ্ছেদ করলে দাঁড়ায় ছাক্কু = সাদেক+ কাক্কু !!!নামের বিরাট বড় ইতিহাস আছে । তবে সেটা এখন না বলাই ভালো । ছাক্কুর ভালো নাম আশরাফুল ইসলাম সাদেক । তবে আমরা এই ভ্রমণ কাহিনীতে ছাক্কু বলেই ডাকব যেমনটা ডেকে থাকি । সাদেক মামা যাদের ডাকার কথা যাদের তারাও ছাক্কু ডাকে , সাদেক চাচা বা কাকা যাদের বলার কথা তারাও ছাক্কুকে ছাক্কু বলে থাকে । ছাক্কু দল-মত-ধর্ম আরও যা কিছু আছে , নির্বিশেষে সবার ! ছোটরা সবাই তাকে এক নামেই ডাকে । ছাক্কু ! ) যদিও আকাশে বিশেষ কিছু দেখার মতো নেই । না থাকলেও সমস্যা হয় না । মেঘগুলোকেই যথেষ্ট আকর্ষণীয় মনে হয় তার কাছে । কোনো মেঘ দেখতে ষাঁড়ের মতো ।(যদিও অন্যরা কোনো মতেই বুঝতে পারে না , এই মেঘ ষাঁড় হতে যাবে কোন দুঃখে !)আবার কোনটা বারেক আলীর ছাগলের মতো ! এমন নানান আকৃতির ।

খুব তাড়াতাড়ি যাবো মেঘের কাছাকাছি । কিন্তু যে ঠাণ্ডা ! মেঘ না দেখে কুয়াশা দেখেই কাটাতে হবে বলে মনে হচ্ছে । আর যা ঠাণ্ডা ! এসব কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়ল ছাক্কুর । আরে ! আমি তো জ্যাকেট নিতেই ভুলে গেছি । ছাক্কুর জ্যাকেট আবার যাকে বলে ‘স্পেশাল’ । কারণ এটা সোজা উল্টা দুভাবেই পড়া যায় । তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে পুলের পাড় থেকে বাড়ির দিকে রওনা দিলো ছাক্কু ।

( পুলের পাড় - দাদুবাড়ির বিশেষ জায়গা । এই পুল আমার বড় দাদা তৈরি করে গিয়েছিলেন । দাদুবাড়িতে মোবাইলের নেটওয়ার্ক পাওয়া ভীষণ কঠিন । একমাত্র এখানেই একটু ভালো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় । আর এখানে যে বাতাস পাওয়া যায় সেটার ব্যাপারে কি আর বলব ! একেবারে ফার্স্ট ক্লাস ! )

২। আমাদের প্রস্ততি

 

সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছিল । প্ল্যানও করা হচ্ছিল । ফেব্রুয়ারিতে সবাই মিলে যাব ফ্যামিলি ট্যুরে । তাই আমাদের ছোটদের মধ্যে চিল একটা চাপা উত্তেজনা । বড়দের মধ্যে যে ছিল তা কিন্তু না । অবশেষে মেসেঞ্জারে একটা গ্রুপ খুলেই ফেলা হলো । নাম – ফ্যমিলি ট্যুর - কক্সবাজার,সাজেক ,খাগড়াছড়ি । সম্ভবত এটাই ছিল গ্রুপের নাম । হোটেল থেকে শুরু করে থাকা খাওয়া সব ঠিক করে ফেলা হলো । ট্রিপটা বেশ বড়ই হবে আমাদের জন্য । অনেক জায়গায় যেতে হবে । আমার আবার Motion Sickness আছে । তাই একটু ভয়ে ভয়ে ছিলাম । তবু এমন সুযোগ তো আর বারবার আসে না । তাই আমরাও প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলাম ।

 

৩। ছোটদের বড় সমস্যা !

 

 

আতিয়া , আতিয়া, আতি আ…… ধুর ! বলতে যাচ্ছি আম্বো যাম্বো(আমিও যাব) কিন্তু মুখ দিয়ে খালি আতিয়া আতিয়াই বেরিয়ে যাচ্ছে । আর এটা শুনেই সবাই কি খুশি ! সাধারণ কথাটাও বুঝবে না , তারপরও আমাকে দেখে হাসবে! একবার এ কোলে নেয় তো আরেকবার ও ! আমি কি ভলি বল নাকি শিশু সেটাই তো বুঝতে পারি না ! কি আজব ! আর মুখটাও এমন বেইমান ! কিছুতেই আসল কথা বের হতে দেয় না ! কথা বলার চেষ্টা ছেড়ে দিল সাইফান । সবাই মিলে ব্যাগ গুছাচ্ছে । আরে ! দেখ আম্মুর কাজ ! আমি কখনো এই হুডি জ্যাকেট পড়ব না! Never! আরে ! তবু ব্যাগে ঢুকায় ! দাঁড়াও !

বলে (বলার চেষ্টা করে আরকী!) এলোমেলো পায়ে এগিয়ে গেল সাইফান । আরেকটু …… এই আরেকটু , আর একবার । ছোট ছোট পা নিয়ে ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগল সাইফান । “আরে , পড়ে যাবে তো!লাবিবা , ওকে ধরো তো !” লাবিবা কোলে করে সাইফানকে সেখান থেকে ধরে নিয়ে চলে গেল ।

 

৪। স্পাইডারম্যান

“ইশরাফ, এই যে ! এইটুকু খেলেই শেষ ! নেও!”

“না ! আমি এখন স্পাইডারম্যান ! আমি এখন কিছু খেতে পারবো না !এখন আমার কাজ খালি মানুষ বাঁচানো !” সোফার উপরে দাঁড়িয়ে নিজের পরিচয় দিল ইশরাফ ।

“আরে ! এসব কি কথা ? আচ্ছা , তুমি স্পাইডার ম্যান তো ? তাহলে এখন থেকে তোমাকে কি খেতে হবে জানো ?

ইশরাফ ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করল , “কি খেতে হবে ? বেশি বেশি করে সবজি ? না ! সেটা একেবারেই সম্ভব না !”

“ তোমাকে তো ভাত সবজি খেতেই হবে , তারসাথে খেতে হবে স্পাইডারের খাবার । আর স্পাইডার কি খায় জানো তো?

ইশরাফের চোখের সামনে ভেসে উঠল সিনেমায় দেখা মাকড়সার খাবার খাওয়ার ঘটনা !

“ও বাবা ! তারচেয়ে শুধু ভাতই খেয়ে বরং খেয়ে নেই !” বলে স্পাইডারম্যানগিরি ছেড়ে গপ গপ করে ভাত খেতে বসল ইশরাফ ।

আয়ান, ইশরাফ , মাসি – তারাও প্রস্তুতি নিচ্ছে নিজেদের মতো ফ্যমিলি টুরে যাওয়ার জন্য ।

 

 

 

৫ । কার্টুন ফ্যান্টাসি

 

“ওই ইয়া ! হাইয়া ! তুম দুশমনকো হাম নেহি ছোড়েঙ্গে ! আরে ! ও তো এক ড্রাগন হ্যায় ! ভাগো !” বলে নিজের কল্পনার রাজ্যেই দৌড়াতে লাগল শায়ান ।

“বাবান! দেখি তো , এই জ্যাকেট টা একটু পড় তো ”বললেন রাসেল ফুফা ।

“আরে তুম হটো ! হাম আভ বিজি হু ! অর সাদেক মে হাম ও নেহি পড়েঙ্গা !

“বাবান ! ওটা সাজেক নাতো ! ওইটা সাজেক । ওখানে অনেক সুন্দর পাহাড় আছে । ওখানে চাকমা , মারমা , ত্রিপুরা ……”

“চাকমা , মারমা , ত্রিপুর ; এগুলো কি ?”

“ত্রিপুর না বাবা । ত্রিপুরা । চাকমা , মারমা , ত্রিপুরারা হলো ”- এসব বলতে বলতে জ্যাকেটটা পড়িয়েই ফেললেন রাসেল ফুফা ।

 

৬। সাদেক না সাজেক!!!

 

আমরা সাদেক গিয়ে( সবাই সাজেকের বদলে সাদেক বলছে কেন ভেবে অবাক হচ্ছেন ? এর কারণ ছাক্কুর ভালো নাম আশরাফুল ইসলাম সাদেক । তাই একটু কনফিউশন হচ্ছে আরকী!) ৪ টা টুপি কিনবো !একটা আমার জন্য ,একটা শেনিন আপুর জন্য, একটা রোদশী আপুর জন্য আর একটা …… আরেকটা টুপি কাকে দেওয়া যায় ভাবতে লাগল সামাইরা ।

“ওই , আমার টুপি কই ?” রাগার ভান করে বললেন শিঞ্জন চাচি ।

“হ্যাঁ ! আরেকটা তোমার জন্য । ” এই বিরাট সমস্যার সমাধান করতে পেরে হাসি ফুটে উঠল সামাইরার মুখে ।

“আচ্ছা আম্মু , পাহাড়গুলো কি অনেএএএক উঁচু হবে ?” হাত যতটা সম্ভব উঁচুতে উঠিয়ে বলল শেনিন ।

“হ্যাঁ , মা । অনেক উঁচু হবে ! ” হেসে বললেন শিঞ্জন চাচি ।

আপাতত তিনি ব্যাগ চেক করে দেখছেন সবকিছু নেওয়া হয়েছে কিনা । তিনি যতবার খুশি চেক করুক , শেষ পর্যন্ত দেখা যায় কিছু একটা নিতে ভুলে গেছেন । এবারও চেষ্টা করছেন সবকিছু ঠিকমতো নিতে । কিন্তু তিনি ভালো করেই জানেন কখনই এটা সম্ভব না । প্রায় সবার ক্ষেত্রেই এটা হয় । যেই মুহুর্তে তিনি বাসা থেকে দূরে চলে যাবেন , তখনই মনে পড়বে , ইয়াল্লা ! আমি তো এটা নেই নাই !

 

৭ । আপুনি

 

এখন সামাইরার জন্য পিংক আর গ্রিন কালারের লজেন্স , দুইজনের জন্য দুইজোড়া জুতা আর একটা সানগ্লাস কিনলেই শপিং শেষ । মনে মনে শপিং – এর হিসাব করল আপুনি ( সম্ভবত আপুনি নামটা এসেছে আপু + নানি = আপুনি বা এরকম কিছু থেকে । ভালো নাম কানিজ সুলতানা ঝুমুর ) দোকান ঘুরতে ঘুরতে দুই নাতির জন্য বিভিন্ন গিফট কিনছেন তিনি । জিনিস কিনতে কিনতে চারটা ব্যাগ হয়ে গেছে । দোকানে যা কিছু দেখছেন তাই পছন্দ হয়ে যাচ্ছে । ব্যাগগুলো নিয়ে হাঁটতে বেশ সমস্যা হচ্ছে । তবু , নাতিদের সঙ্গে দেখা হবে বলে কথা !

 

৮। দাদুর চিন্তা

 

সাদেক, সাদেক ,এ সাদেক ! চেঁচিয়ে ছাক্কুকে ডাকল দাদু । ছাক্কু ধীরে ধীরে দু তলা থেকে নিচে নামল । তারপর আস্তে আস্তে বলল , কীতা( কি হয়েছে) ?

উঠানে কয়েকটা মুরগি এদিক সেদিক হাঁটছিল । সেগুলোর দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন , “মুরগি দুইটা কম ! শিয়ালে নিসে গা !”

“তো আমি কিতা করতাম?” ছাক্কুর সহজ উত্তর ।

“মুরগি না ঘরে তুই তুলছিলে ?” মুরগিগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে প্রশ্ন করল দাদু ।

“আমি তো বেকটিই( সবগুলোই ) তুলছিলাম । যাই হোক । তুমি চোখে ঔষুধ দিছিলা ? ” ছাক্কু বিষয় পাল্টানোর চেষ্টা করল ।

চেষ্টা কাজে দিয়েছে ।

“ না । ড্রপের বোতল তো পাই না । পোলাপানে কই নিয়া ফালায়ে দিসে কে জানে ! এই আদিব !

আদিব তখন সামনে দিয়ে যাচ্ছিল । সে এখন বিরাট ব্যাস্ত । উঠানের জায়গায় জায়গায় গর্ত খুঁড়ে সেখানে পানি ঢেলে দেওয়ার বিরাট প্রজেক্ট তার হাতে । তার হাতে ( আসল হাতে আরকি) দড়িও আছে । যদিও এটা ঠিক কোন মহৎ কাজে লাগবে তা বলা যাচ্ছে না । ছোট বেলা থেকেই দড়ির প্রতি আলাদা দরদ তার । তখন থেকেই দড়ি নিয়ে টানাটানির অভ্যাস । আর আদিব দড়ি দিয়ে যেসব গিঁট দেয় তার কাছে কিছুই না । মহাবিরক্ত হয়ে দাদু আর ছাক্কুর দিকে এগিয়ে এলো সে ।

“কি ?”

“আবার দা ! উঠানে তো একশ গর্ত কইরাই ফেলছস ! এখন কি দিঘী বানাবি ? যা , দা রাইখ্যা আয় !”

কিন্তু আদিব দা আরও শক্ত করে ধরে বলল , “ না !”

দাদু জিজ্ঞাসা করল, “আদিব, আমার চোখের ড্রপটা দেখছো?”

আদিব চোখ বড় বড় করে বলল , “ হুই যে

 

 

                                                                                                                                                         চলবে ……

           

 

 

Imprint

Text: Araf Ibn Touhid
Images: Araf Ibn Touhid
Editing: Araf Ibn Touhid
Publication Date: 09-04-2020

All Rights Reserved

Dedication:
To my parents.